চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহাসিক সোনামসজিদের সুদূরে অবস্থিত ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আছে তোহাখানা কমপ্লেক্স। ছোট সোনা মসজিদ থেকে ৫০০ মি. উত্তর-পশ্চিমে জাহেদুল বালা নামের দীঘির পশ্চিম পাড়ে তোহাখানা কমপ্লেক্স-এর অবস্থান। দ্বিতল বিশিষ্ট এ ইমারতটির পরিমাপ ৩৫.৩৫মি.-১১.৫৮মি.। উত্তর-পুর্ব ও দক্ষিণ-পুর্ব কোণায় দু’টি অষ্টকোণাকৃতির কক্ষসহ উপরতলায় মোট ১৭টি কক্ষ আছে। উত্তর পাশের কক্ষটি নামাজ কক্ষ এবং অন্যান্য কক্ষগুলো দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজেঃ যেমন- ক্ষৌরকর্ম, বিশ্রাম, আপ্যায়ন, ভোজনালয়, গোসল ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হতো।
দক্ষিণ পাশে গম্বুজ আকৃতির হাম্মামখানা অবস্থিত। দক্ষিণ-পুর্ব কোণায় অবস্থিত ১টি সিঁড়ি পুকুর পর্যন্ত ধাবমান রয়েছে। হাম্মামখানা ও প্রসাধনাগারে মাটির পাইপের সাহায্যে গরম এবং ঠান্ডা পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। চুন-সুরকির সাহায্যে ছোট আকৃতির ইট দ্বারা নির্মিত এ ইমারতের ভিতরের দেয়ালপাত্রে কুলঙ্গিসহ অন্যান্য নকশা রয়েছে। তোহাখানা শব্দটির অভিধানিক অর্থ হল রাজবাড়ি। এটি বিশাল এক পুকুরের পশ্চিমতীরে অবস্থিত একটি সুবিশাল স্থাপনা, যা তোহাখানা নামে পরিচিত। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে (গৌড়ের পূর্বাঞ্চলে) ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব যারা বহন করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে স্বনামধন্য সাধক হযরত শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহ (রহঃ) অন্যতম।
ঐতিহাসিকদের মতে, সুলতান শাহ সুজার রাজত্বকালে (১৬৩৯-১৬৬০ খ্রিঃ) তিনি দিল্লী প্রদেশের করোনিয়ার নামক স্থান থেকে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে নানা স্থান ভ্রমণ করে রাজমহলে এসে উপস্থিত হন। তার আগমনবার্তা জানতে পেরে শাহ সুজা তাঁকে অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে অভ্যর্থনা জানান এবং তাঁর নিকট বায়াত গ্রহণ করেন। পরে তিনি গৌড়ের উপকন্ঠে (শিবগঞ্জ উপজেলার) ফিরোজপুরে স্থায়ীভাবে আস্তানা গড়ে তোলেন। এদিকে, সুলতান শাহ সুজা তাঁর মুর্শিদ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহ এর উদ্দেশ্যে শীতকালীন বসবাসের জন্য ফিরোজপুরে তাপনিয়ন্ত্রণ ইমারত হিসেবে এ ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন। সময়ে সময়ে শাহ সুজাও এখানে এসে বাস করতেন। বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থ হতে জানা যায়, মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ্ সূজা বাংলার সুবেদার থাকাকালে ১৬৩৯-১৬৫৮ খ্রিঃ মতান্তরে ১৬৩৯-১৬৬০ খ্রিঃ তাঁর মুরশিদ হযরত শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহর প্রতি ভক্তি নিদর্শনের উদ্দেশ্যে তাপনিয়ন্ত্রিত ইমারত হিসেবে তোহাখানা ও কমপ্লেক্স অর্থাৎ মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে আশায় মসজিদ নির্মাণ করেন এবং দীর্ঘদিন এতদঞ্চলে তিনি সুনামের সঙ্গে ইসলাম প্রচার করে ফিরোজপুরেই ১০৭৫ হিজরী (১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে) মতান্তরে ১০৮০ হিজরীতে (১৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে) সমাধিস্থ হন। এই ঐতিহাসিক তোহাখানা ও হযরত শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহর সামধিস্থল দেখতে বছরজুড়েই সারাদেশ ও বিদেশের ভ্রমনপিপাসুরা দর্শন করেন এবং মাজার জিয়ারত করেন।