নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী সিফাত হোসেনকে (১৪) আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী আজাহার আলী, সাজেদুর রহমানসহ অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে নিহতের স্বজন, সহপাঠী ও এলাকাবাসী। সোমবার বেলা ১১টায় উপজেলার কীর্ত্তিপুর বাজারে স্কুলের সহপাঠী ও এলাকাসী ব্যানারে আয়োজিত এ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন এলাকার সর্বস্তরের জনগণ। মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নিহত সিফাতের বাবা মিজানুর রহমান ও মা সাজলী বেগম। মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘এলাকায় একটি কিশোর গ্যাং-এর নেতৃত্ব দিচ্ছে কীর্ত্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স্মরণ শাহরিয়ার (১৫)। সে ও তার সঙ্গীরা নানা ধরণের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তারা প্রায় সময় শিক্ষার্থীদের মারধর করেন এবং নানাভাবে নির্যাতন করেন। এসব ঘটনায় স্কুলে বিচার দিলে প্রধান শিক্ষক তাতে কোনো কর্ণপাত করেন না। এর আগেও গত ১৭ ফেব্রুয়ারি স্কুলে করোনার টিাকার ডোজ নিতে গিয়ে স্মরণ ও তার সঙ্গীদের দ্বারা আমার ছেলে মারধরের শিকার হয়। এই ঘটনায় প্রধান শিক্ষককে বিচার দিয়েছিলাম। কিন্তু স্মরণের বাবা (সাজেদুর রহমান) একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক হওয়ার কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষ এই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আমার ছেলেকে ভৎর্সনা করেন। এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ও তাদের সহায়তাকারী হিসেবে শিক্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।’ সিফাতের মা সাজলী বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। তবে আমার ছেলের মতো আর কোনো মায়ের সন্তান যেন মানুষরূপী কিছু অমানুষের কারণে এভাবে কষ্ট নিয়ে পৃথিবী চলে না যায় সেই দোয়া করি। যাঁদের কারণে আমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে তাঁদের শাস্তি চাই।’ এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নওগাঁ সদর থানার এস.আই রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এই ঘটনায় থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলা করেন আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে নিহত শিক্ষার্থীর বাবা ও স্কুলে হামলা চালিয়ে সহকারী শিক্ষক সাজেদুর রহমান ও স্কুলে ভাঙচুরের অভিযোগে অপর মামলাটি করেন প্রধান শিক্ষক আজহার আলী। সিফাতের বাবার করা মামলার কয়েকজন আসামি হাইকোর্টের আদেশে আগাম জামিনে রয়েছেন। বিষয়টি পুঙ্খানুপঙ্খভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। খুব শিঘ্রই আদালতে এজাহার দাখিল করা হবে।’ স্কুলশিক্ষার্থী সিফাত আত্মহত্যার ঘটনায় গত ২ জুন রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় অস্বাভাবিক হত্যা মামলা ও নওগাঁর আমলী আদালতে গত ৯ জুন মামলার গ্রহণের আর্জি দায়ের করেন নিহতের বাবা মিজানুর রহমান। পরে আদালতের নির্দেশে এ ঘটনায় দণ্ডবিধির ৩০৬/৩৪ ধারায় আত্মহত্যার প্ররোচনা ও সহায়তা করার অপরাধে আটজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে বিষয়টি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে নওগাঁ সদর থানা পুলিশ। এই মামলার বাদী নিহতের বাবা মিজানুর রহমান। আদালতে করা মামলার আর্জি সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ মে সকালে স্কুলের অ্যাসেম্বলিতে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে কীর্ত্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিফাত হোসেনকে বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্মরণ শাহরিয়ার, হৃতিক ও রিয়াদ হোসেন মারধর করেন। ঘটনাটি সিফাত তার পরিবারকে জানালে ওই দিনই সিফাতের বাবা মিজানুর রহমান প্রধান শিক্ষক আজাহার আলীর কাছে অভিযোগ করেন। কিš‘ প্রধান শিক্ষক বিষয়টিতে কর্ণপাত না করে উল্টো সিফাতকেও মারপিট করতে বলেন, নতুবা হাতে মেয়েদের চুরি পরে থাকতে বলেন। এছাড়া প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ করায় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী স্মরণ শাহরিয়ারের বাবা সাজেদুর রহমান শিক্ষার্থী সিফাতকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং বিদ্যালয় হতে টিসি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি প্রদান করেন। এ সময় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুবল মণ্ডল ও নজরুল ইসলামও সিফাতকে নিয়ে হাসাহাসি করেন। ন্যায়বিচার না পাওয়ায় অত্যন্ত মনোকষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে ওই দিন রাতে গ্যাস বড়ি (কীটনাশক) খায় সিফাত। গুরুতর অবস্থায় প্রথমে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতাল এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অব¯’ায় পর দিন (১ জুন) দুপুরে তার মৃত্যু হয়।