সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত যুবদল ও ছাত্রদলের তিন নেতাকর্মী হত্যার ঘটনায় সাবেক দুই সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিবের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে নিহতদের স্বজনরা বাদী হয়ে সদর থানায় আওয়ামীলীগের জ্ঞাত-অজ্ঞাত ৯ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলাগুলো করেন বলে সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান। প্রতিটি মামলায় সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্না, সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী, মন্ত্রী পরিষদের সাবেক সচিব কবির বিন আনোয়ার অপুকে আসামি করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সরকার পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জ শহরে বিএনপি, জামায়াত ও ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের পৃথক সংঘর্ষে এই তিনজনের মৃত্যু হয়। নিহতদের মধ্যে শহরের মাছুমপুর মহল্লার বাসিন্দা ও যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহানুর রহমান খান রঞ্জুর স্ত্রী মৌসুমী খাতুন বাদী হয়ে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে, গয়লা মহল্লার নিহত ছাত্রদল নেতা সুমনের বাবা গঞ্জের আলী বাদী হয়ে ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে এবং একই মহল্লার যুবদল কর্মী নিহত আব্দুল লতিফের বোন সালেহা খাতুন বাদী হয়ে ১৫৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। প্রতিটি মামলায় ১০০ থেকে ১৫০ জন করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। সাবেক দুই সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব ছাড়াও সব মামলাতেই আসামি করা হয়েছে-জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান শামীম তালুকদার লাবু, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন, সিরাজগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কে. এম হোসেন আলী হাসান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার, সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান, সিরাজগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাখাল ও স্বাচিব সিরাজগঞ্জ শাখার সভাপতি জহুরুল হক রাজাকে। এছাড়াও সিরাজগঞ্জ সদর ও কামারখন্দ উপজেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা আসামির তালিকায় রয়েছেন। সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানান, এসব মামলায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। তবে আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশী অভিযান শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সিরাজগঞ্জে যুব ও ছাত্রদলের এই তিন নেতাকর্মীসহ মোট ২৯ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে এনায়েতপুর থানায় হামলায় ওসিসহ ১৫ পুলিশ সদস্য, ছাত্র-জনতা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন এবং রায়গঞ্জে আওয়ামী লীগ অফিস ও প্রেসক্লাবে হামলায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পাঁচ নেতা ও একজন সাংবাদিক নিহত হন। এছাড়া জান্নাত আরা হেনরীর বাসায় আন্দোলনকারীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছেন দুজন। বিএনপি নেতাকর্মী হত্যায় এনায়েতপুর ও সিরাজগঞ্জ সদরে এ পর্যন্ত ছয়টি মামলা হলেও অন্য ঘটনাগুলোতে এখনও কোনো মামলা হয়নি।