1. tohidulstar@gmail.com : sobuj ali : sobuj ali
  2. ronju@chapaidarpon.com : Md Ronju : Md Ronju
শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজ, সভাপতি যখন অধ্যক্ষ ॥ নিজ বাড়িতে অফিস ॥ কলেজের নিয়ন্ত্রণ এনজিও’র হাতে - দৈনিক চাঁপাই দর্পণ
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১০:৪২ পূর্বাহ্ন

শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজ, সভাপতি যখন অধ্যক্ষ ॥ নিজ বাড়িতে অফিস ॥ কলেজের নিয়ন্ত্রণ এনজিও’র হাতে

♦ নিজস্ব প্রতিনিধি 
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২২
  • ২৩১৩ বার পঠিত

শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজ
সভাপতি যখন অধ্যক্ষ ॥ নিজ বাড়িতে অফিস ॥ কলেজের নিয়ন্ত্রণ এনজিও’র হাতে

কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নিজেই অধ্যক্ষের ভূমিকায় থেকে সকল কাজ করছেন, নিজ বাড়িয়ে অফিস বসিয়ে চালাচ্ছেন কলেজের প্রায় সকল কার্যক্রম। কলেজের আভ্যন্তরীন ও বিভিন্ন অফিসিয়াল কার্যক্রম চালাচ্ছেন জেলার একটি এনজিওকে দিয়ে। কলেজের গোপন সকল তথ্য থাকছে গভর্নিং বডির একজন সদস্য’র পরিচালিত এনজিও’র নিয়ন্ত্রণে। কলেজের জমি অন্যের নামে নিতে সড়যন্ত্র চললেও কোন মাথা ব্যাথা নেই সভাপতিসহ গভর্নিং বডির সদস্যদের। কলেজের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য তোড়জোড় চালানো হচ্ছে। কলেজের এসব কার্যক্রম বিষয়ে কেউ কথা বলার সাহস পর্যন্ত করছেন না সভাপতির ভয়ে। নিজ ক্ষমতাবলে বন্ধ রেখেছেন কলেজের অনার্স বিভাগের বেশ কয়েক মাসের বেতন-ভাতাদী ও কর্মচারীদের কলেজ থেকে প্রাপ্ত আর্থিক সুবিধাদীও। এমন সব নানা অভিযোগ চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজ’ এর পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বালুগ্রাম আদর্শ কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জালিয়াতকারী মো. সাইদুর রহমান। অন্যদিকে, কলেজের দুই/একজন আস্থাভাজন এবং সাবেক অধ্যক্ষ মরহুম আনোয়ারুল ইসলামের দোষর ও অনিয়মের সহায়তাকারী শিক্ষকদের নিয়ে অনিয়মের কাজ চালানো, অধ্যক্ষের ক্ষমতা খর্ব করে ও জিম্মি করে সভাপতির সকল কাজ করা হচ্ছে। এদিকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এসব বিষয় স্বীকার করে জানিয়েছেন তাঁর অসহায়ত্বের নানা কথা। ক্ষুদ্ধ কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারীরা। তাঁর স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও নানা অত্যাচারের প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন কলেজের এক অভিভাবক সদস্য। জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজ’ পরিচালনার জন্য ২০২০ সালে গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনয়ন দেয়া হয় কয়েক মাসের জন্য (সংসদ সদস্যদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার আদেশের কারণে)। পরিচালনা পর্ষদ গঠনের সময় বালুগ্রাম আদর্শ কলেজের অব. অধ্যক্ষ মো. সাইদুর রহমান নিজেকে সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন পেতে উঠে পড়ে লাগেন। প্রথম দফায় জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের সাথে সখ্যতা থাকায় কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হন তিনি। সভাপতি মনোনীত হওয়ার পর থেকেই তিনি শুরু করেন নিজ মনমতো কাজ করতে। জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর জালকারী ও বালুগ্রাম কলেজের দায়িত্ব পালনকালে নানা অপকর্মের হোতা, সকল অনিয়ম ও অপকর্মের প্রমান নিশ্চিহ্ন করতে কলেজের কম্পিউটারের মাদারবোড উধাওকারী, অজ্ঞাত কারনে কলেজের ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে ভিআইপি চেয়ারে বসিয়ে কম্পিউটারের কার্যক্রম চালানো, ওই কর্মচারীর স্ত্রীকে চাকুরী দেয়ার জন্য কৌশলসহ নানা অনিয়ম ও কাজের হোতা একজন বিতর্কিত মানুষকে এমন স্বানমধণ্য কলেজের সভাপতি মনোনয়ন দেয়ায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ ও এলাকাবাসী মানববন্ধন পর্যন্ত করে কলেজ গেটে। তারপরও তিনি নাছোড়বান্দা, দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই শুরু হয় স্বেচ্ছাচারিতা, দায়িত্বপ্রাপ্ত কলেজ অধ্যক্ষ মো. শরিফুল আলমকে হাতের পুতুল বানিয়ে নাচিয়ে নিয়ে বেড়াতে থাকেন। পরিচালনা পর্যদের ক্ষমতা খাটিয়ে নিজের পছন্দমত সব কাজ করিয়ে নেন এবং উপায়ান্তর না পেয়ে মুখ বুজে সব কাজ করতে বাধ্য হন তখনকার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. শরিফুল আলম। এভাবেই মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালে। ২০২১ সালের জানুয়ারী মাসে আবারও একই কায়দায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে দিয়ে কৌশলে ও চাপ দিয়ে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ে সকল কাগজপত্র নিজে পাঠিয়ে এবং নিজের আস্থাভাজন লোক থাকায় আবারও সভাপতি মনোনয়ন পেয়ে যান সাইদুর রহমান। তারপর থেকেই নতুন নতুন পরিকল্পনা ও নিজের আখের গোছাতে শুরু করেন সভাপতি পরিচালনা পর্ষদের কিছু সদস্যকে নিয়ে। এরই অংশ হিসেবে কলেজের অধ্যক্ষসহ কয়েকটি কর্মচারী পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে। সেখানেও স্বজনপ্রীতি, নিজ স্বার্থ হাসিলসহ বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করার পরিকল্পনা, কলেজে শিক্ষার্থী হিসেবে না থাকলেও অভিভাবক সদস্য রাখা, নিজ পছন্দমত সদস্যদের দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার তোড়জোড় শুরু করেন। প্রেক্ষিতে কলেজের একজন অভিভাবক এসব অনিয়ম ও বিতর্কিত কার্যকম বন্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-৪৪/২০২২ অঃপ্রঃ। তারিখ-২২/০৩/২০২২ইং। মামলায় শুনানী শেষে কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্যদের উপর কারণ দর্শানোর আদেশ দেন বিজ্ঞ আদালত। এদিকে, আদালতের নোটিশ পাওয়ার পরও নিয়োগ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন সভাপতি। যা আদালতকে অবমাননার সামিল বলছেন মামলার আইনজীবী। এদিকে, কলেজের সকল অনলাইন কার্যক্রম এবং কলেজের গোপন পিন নম্বর একটি এনজিও (প্রয়াস) যা কলেজের পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্যের দ্বারা পরিচালিত) দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। কলেজের অফিস সহকারী, কম্পিউটার ল্যাবসহ অন্যান্য সকল কারিগরি যন্ত্রপাতি থাকলেও জেলার প্রয়াস নামের এনজিওকে দিয়ে কাজ করাচ্ছেন এবং কলেজ ফান্ড থেকে মাসিক মোটা অংকের টাকা দিচ্ছেন। এছাড়া কলেজের গোপন সকল অনলাইন ভিত্তিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে ওই এনজিওর লোক দিয়ে। কলেজে একটি রুম বরাদ্দ দিয়ে এভাবে কাজ করানো হচ্ছে। তবে কোন অজ্ঞাত কারনে এটা করা হয়েছে তা কেউ বধোগম্য নয়, এমনকি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষও কিছুই জানেন না। কলেজের সকল কাজ কলেজ অধ্যক্ষ এর দায়িত্বে থেকে করার কথা থাকলেও সেসকল কাজ করছেন সভাপতি নিজ পছন্দের এবং বাইরের একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে। শুধুমাত্র নিজের নিয়ন্ত্রণে সবকিছু রাখার উদ্দেশ্যে। এমনকি কলেজ কর্তৃপক্ষকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের দেয়া একটি মোবাইল সিমকার্ড, সেটাও সভাপতির কাছে নিজ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। সব মিলিয়ে কলেজকে একটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনা করছেন এবং নিজের ইচ্ছামত পরিচালনা করছেন। এদিকে, কলেজের দীর্ঘদিন দখলে থাকা জমি অন্য একজন চেক (দাখিলা) কেটে নিয়ে দখলের সড়যন্ত্র করলেও সভাপতি বা কলেজ পরিচালনা পর্ষদের কোন মাথাব্যাথা বা পদক্ষেপ নেয়। যেখানে নিজের লাভ নেই, সেখানে কোন কাজও নেই। এমনটায় যেন। কলেজের সকল কার্যক্রম প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্বে বা নিয়ন্ত্রণে না থেকে সভাপতির কাছে এমন প্রশ্নে কলেজের সকল অভিযোগ ও অত্যাচারের বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহা. হাকিকুল ইসলাম জানান, আমি একজন নামমাত্র অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। বলা যায়, একটা পুতুল। চেয়ারে বসিয়ে রেখেছে আমাকে। কলেজের সকল কাজ আমার করার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারনে সভাপতি নিজেই সব করছেন এবং নিজের মনমত করছেন। কোন সময় সাদা প্যাডে স্বাক্ষর করে এবং স্মারক দিয়ে কলেজের প্যাড চেয়ে পাঠান নিজের বাড়িতে। নিজের পরিকল্পনামত কলেজের সকল গোপন তথ্য বাইরের একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করাচ্ছেন এবং কলেজের অর্থ খরচ করছেন। আমি যেন একজন ঠুটো জনন্নাথ। যদিও আমার অনিচ্ছা স্বত্ত্বে জোরপূর্বক আমাকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে বাধ্য করেছেন। সব মিলিয়ে কলেজের সভাপতিই এখন অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান তিনি। এব্যাপারে মামলার বাদীর আইনজীবী এ্যাড. সৈয়দ তৌহিদুজ্জামান বলেন, কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাইদুর রহমানসহ অনান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, নিয়োগ বন্ধসহ নানা অভিযোগে কলেজের একজন অভিভাবক সদস্য মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় শুনানী শেষে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক কারন দর্শানোর আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই আদেশের পর কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়োগ সংক্রান্ত কোন কার্যক্রম চালানো বা যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়, সেসকল বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যাখা না দিয়ে আদালতকে বোঝাতে সক্ষম না হবে, ততদিন পর্যন্ত সকল অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। যদি কলেজ কর্তৃপক্ষ বা পরিচালনা পর্ষদ আদালতের আদেশ অমান্য করে নিয়োগসহ অন্যান্য বিতর্কিত কার্যক্রম চালাতে থাকে, তবে সেটা আদালতকে অমান্য করা। এব্যাপারে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অব. অধ্যক্ষ (বালুগ্রাম) মো. সাইদুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কলেজের বিষয়ে কোন কিছু জানতে বা বলতে রাজি নই। তবে তিনি মামলার কার্যক্রম বিষয়ে বলেন, আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করেই সকল কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর হাবিবুর রহমান বলেন, একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ রক্ষার জন্য কলেজের কোড মিলিয়ে একটি মোবাইল সিমকার্ড দেয়া হয়। সেটা কলেজ অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যদি কলেজের সভাপতি বা অন্য কারো কাছে এর নিয়ন্ত্রণ থাকে, তবে সেটা অবশ্যই অনিয়ম এবং অন্যায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
Copyright All rights reserved © 2024 Chapaidarpon.com
Theme Customized BY Sobuj Ali
error: Content is protected !!