জেলায় আমের শেষ মৌসুমের আম আশি^না। এই আম টক এবং মিষ্টি হলেও বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করায় আশি^না আমের স্বাদের এসেছে ভিন্নতা। প্রযুক্তির ব্যবহারে আশি^না আমের পাল্টেছে রং ও মিষ্টতা। ফলে দিন দিন বাড়ছে শেষ মৌসুমের আম আশি^নার চাহিদা। আগের চেয়ে দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষক ও চাষীরা।
সরজমিন ঘুরে জানা গেছে, মৌসুমের শেষ আম আশ্বিনা। বাজারে এখন শুধু আশ্বিনা আমই বিক্রি হচ্ছে। কানসাটের আম বাজারে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। এর আগের বছর গুলোতে বাজারে এ আম কম পরিমাণে বিক্রি হতো। এখন বেশি পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে। দামও বেশী। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে-জেলায় ২৪ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে ৭ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৫ গাছে আশ্বিনা আমের চাষাবাদ হয়েছে। জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণে এ আমের চাষাবাদ হচ্ছে।
এখানে ৫ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ গাছে আশ্বিনা আবাদ হচ্ছে। আম ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন বলেন, এ বছরে বৃষ্টি বাদল কম। বর্ষার মৌসুমে আশ্বিনা আমের ব্যপাক ক্ষতি হয়। কিন্তু এ বছর ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ খুব কম। তাই অনান্য বছরের তুলনায় এ বছরে বেশিদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে আশ্বিনা আম। ব্যবসায়ী আশরাফুল বলেন, আগে এ জেলার আশ্বিনা আমের যত্ন নিতো না চাষীরা। আশ্বিনা আম টক হওয়ায় আচার অথবা জুসের জন্য বিক্রি করে দিত। এখন বেশি বেশি পরিচর্যা করছেন চাষিরা। আগে বৃষ্টি বাদলের কারণে বেশি পরিমাণে আম নষ্ট হতো, এখন আশ্বিনা আমে ফ্রুট ব্যাগিং করায় কম নষ্ট হচ্ছে। আর বাজারে এ আমের চাহিদা বেড়েছে। আম ব্যবসায়ী আমিরুল বলেন, নিরাপদ আম উৎপাদনের কারণে আমে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। আশ্বিনা আমে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করলে, আকার আকৃতি বাড়ে। আমে পোকা মাকড় থেকে রক্ষাও পাওয়া যায়। ব্যাগের কারণে আমের গায়ের রং সবুজ থেকে বাদামি রঙের হয়। যার ফলে আমের গায়ের রঙ আর স্বাদে অতুলনীয়। দেখতেও মজাদার হয়। কানসাটের আম বাজারে আশ্বিনা আম বিক্রি করতে আসা মেহেদী হাসান বলেন, মৌসুমের শেষ দিকে বাগানে আশ্বিনা আম পাওয়া যায়। গত বছর আশ্বিনা আম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকা মণ পর্যন্ত। এ বছরের সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করছি। কানসাট আড়ৎদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু বলেন, আমের মৌসুম প্রায় শেষ। বাজারে অন্য কোন আম নেই। এখন আশ্বিনা আম পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ খাওয়ার জন্য ফ্রুট ব্যাগিং প্যাকেটের আম বেশি কিনছে। আগে আশ্বিনা আমের বাজার ভালো ছিল না। এখন এ আম বেচা বিক্রি ভালো হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান বলেন, কেউ যদি আশ্বিনা আমের রঙ বদলাতে চাই, বাদামি রঙের ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করলে আমের গায়ের রঙ বদল হবে। মূলত ওই ব্যাগের ভিতরে কার্বন পেপার থাকার কারণে আমের গায়ের রঙ বদলে যায়। এ ব্যাগ ব্যবহারের ফলে ক্ষতিকর পোকা মাকড় থেকে আমকে রক্ষা করা যাবে। তবে এ ব্যাগ ব্যবহারে আমের স্বাদ কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া আমে সাদা ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করলে আমের রঙ পরিবর্তন হবেনা। আমের অরিজিনাল স্বাদ থাকবে, মিষ্টির কোন পরিবর্তন হবে না। তবে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার করে আম দেখতে সুন্দর হওয়ায় বাইরের ক্রেতাদের চাহিদা বাড়ছে। কৃষকও লাভবান হচ্ছে।