শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশ সরকারের প্রকাশিত তালিকাভুক্ত পোরশা উপজেলার ১ নং রাজাকার হাজি সমসের আলীর পুত্র হাজি আব্দুল ওয়াদুদ উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। ক্ষমতাসিন দলের উপজেলার নেতা হওয়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন। এতে দলের ত্যাগী ও বঙ্গবন্ধু সৈনিকরা চরম ক্ষুদ্ধ এবং চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠক হলেও এই দলের ছত্রছায়ায় নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদকের পদ আঁকড়ে ধরে আছেন তালিকা ভুক্ত রাজাকার হাজি সমসের আলীর পুত্র হাজি আব্দুল ওয়াদুদ। এখানেই শেষ নয়, স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের হলেও অজ্ঞাত ইশারা ও ক্ষমতাবলে রাজাকারের ৩ ছেলেই বর্তমান সরকারের আমলে ক্ষমতাসিন আওয়ামীলীগের নেতা। স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের ছেলেকে স্বাধীনতা পক্ষের দলের এবং ক্ষমতাসিন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে এমন অমার্জনীয় অপরাধের সাথে যাঁরা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ স্থানীয় নেতা-কর্মীদের। দলের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে, দ্রুত এর সমাধান এবং রাজাকারের ছেলেকে আওয়ামীলীগ দলের নেতার আসনে বসানোর দায়ে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন ক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীরা। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকারের প্রকাশিত রাজাকারের তালিকাভুক্ত পোরশা উপজেলার নিতপুর পূর্ব দিয়ারাপাড়ার রাজাকার হাজি সমসের আলী ও মোসা. নুরজাহানের পুত্র হাজি আব্দুল ওয়াদুদ, মো. আব্দুল গনি ও মো. আব্দুল মতিন।
স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের হলেও অজ্ঞাত ছায়াতলে থেকে রাজাকারের ৩ ছেলেই বর্তমান সরকারের আমলে ক্ষমতাসিন আওয়ামীলীগের নেতা। এর মধ্যে একজন আব্দুল ওয়াদুদ পোরশা উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আরেক ভাই আব্দুল মাতিন থানা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা সদস্য এবং ছোট ভাই মাহবুব হোসেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে গত ৭ বছর ধরে রাজাকার পুত্র উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ উপজেলা আওয়ামীলীগের দলীয় ত্রিবার্ষিকী কাউন্সিলের মাধ্যমে মনোনীত হয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন তালিকাভূক্ত রাজাকার হাজি সমসের আলীর পুত্র হাজি আব্দুল ওয়াদুদ। এতে করে যেমন উপজেলার ত্যাগী আওয়ামী পরিবারের সদস্যরা পদবঞ্চিত হচ্ছেন, ঠিক তেমনিভাবে রাজাকার পুত্রের ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে অতিষ্ট হচ্ছেন স্থানীয় আ’লীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। এত ক্ষমতার উৎস কোথায়? এমন প্রশ্ন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের মনে। একজন সরকারি তালিকাভুক্ত রাজাকার পুত্র কিভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর মতো মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের রাজনৈতিক দলের উপজেলা কমিটিতে স্থান পায় এবং দাপটের সাথে রাজনীতি করে, সে প্রশ্ন উপজেলা আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকর্মীদের মাঝে। এ বিষয়ে পোরশা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে পরে কথা হবে। আমি এখন নামাজে যাবো।’ এই বলে ফোন কেটে দেন তিনি। একজন রাজাকার পুত্র কমিটিতে স্থান পায় কোন ক্ষমতার বলে? এ বিষয়ে পোরশা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন এর নিকট জানতে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে সাক্ষাতে আসতে হবে, মোবাইলে নয়।’ এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ সভাপতি ও সদস্য ওবায়দুল্লাহ শেখ বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা আছে, কোন রাজাকারের সন্তানদের উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে স্থান দেয়া যাবেনা। কিন্তু এখানে তার উল্টো। যা আমাদের কারুরই কাম্য নয়। তাহলে কি করে হাজি ওয়াদুদ এই কমিটিতে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখুন-উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করা হয় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারা। তারা জেনে শুনে যদি রাজাকার পুত্রকে কমিটিতে রাখেন, তাহলে আমাদের কি করার আছে। আমরা কখনই রাজাকার পুত্রের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজনীতি করতে চায়না। একই বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডাক্তার আজিজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক কথায় বলতে গেলে, এটা অনেক দুঃখের এবং লজ্জার। কারণ এটি আওয়ামীলীগের কোন অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন না। রাজাকার পুত্র মূল দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন। আমরা অতি ক্ষুদ্র কর্মী। এখানে জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের নেতারা এটা বাস্তবায়ন করেছেন। তাদের বাইরে কথা বলার শক্তি বা সাহস আমাদের নেই। তবে, এ বিষয়ে ভাইস চেয়ারম্যান কাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোটা অংকের টাকা খেয়ে রাজাকার পুত্র হাজি আব্দুল ওয়াদুদ কে উপজেলা কমিটিতে স্থান দিয়েছেন। বিষয়টি মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ভালোভাবে জানলেও অজানা কারণে তাকে সে পদে বহাল রেখেছেন। রাজাকার পুত্রকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আমি থানা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক ছিলাম। সত্য কথা বলায় আমাকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য পদে রেখেছেন। রাজাকার হাজি সমসের আলীর ছেলেরা আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে বাড়ি গাড়ি সহ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কাজিবুল ইসলাম আরোও বলেন, শুধু তাই নয়, পোরশা উপজেলার ১নং তালিকাভুক্ত রাজাকার হাজি সমসের আলীর বড় ছেলে হাজি ওয়াদুদের ভাই আব্দুল মাতিনও থানা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এছাড়াও তার ছোট ভাই মাহবুব হোসেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা কর্মী বলেন, রাজাকার পুত্র হাজি আব্দুল ওয়াদুদ ও তার বড়ভাই আব্দুল মাতিন এর আচরণে ক্ষুব্ধ দলীয় নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ। হাজি সাহেব সব সময় নিজেকে সর্ব ক্ষমতার মালিক মনে করেন। যার ফলে পুলিশ প্রশাসনসহ সবখানে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চলেন। তারা বলছেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের বড় পদধারী ক্ষমতাধর নেতাদের ছত্রছায়ায় রাজনীতি করছেন রাজাকার পুত্ররা। সে কারণে কারো পক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা সম্ভব হচ্ছেনা। এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজাকার পুত্র হয়ে তিনি যেভাবে আমাদেরকে অর্ডার করেন, তাতে মনে হয় আমরা তার জন্যই চাকুরি করতে এসেছি।’ নেতা-কর্মীদের দাবি, অনতিবিলম্বে আওয়ামীলীগের কমিটি থেকে রাজাকার পুত্রদের ছুঁড়ে ফেলে মহান স্বাধীনতার মান রক্ষা করার। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে এগিয়ে আসবেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুল কাদের, এমনটা আহ্বান পোরশা উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের।
