1. tohidulstar@gmail.com : sobuj ali : sobuj ali
  2. ronju@chapaidarpon.com : Md Ronju : Md Ronju
সময়ের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী পাল তোলা নৌকা - দৈনিক চাঁপাই দর্পণ
রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে সরকারের ২ কমিটি ট্যাফিক ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে-আসিফ মাহমুদ সরকারকে একটি ভালো নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে হবে-শামসুজ্জামান দুদু রামেবি’র উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ বিষয়ে রাজশাহীর গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় রহনপুর স্টেশন ব্যবসায়ীদের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় জয়পুরহাটে আবারও বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার চেষ্টা মেট্রোরেলে রেকর্ড: ১৯ দিনেই ছাড়ালো ৬ মাসের আয় রামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গৃহবধুর মৃত্যু বগুড়ায় ৫ থানায় নতুন অফিসার ইনচার্জ নিয়োগ বৈষম্যহীন বাংলাদেশে সবার অধিকার নিশ্চিত করা হবে: নাহিদ ইসলাম

সময়ের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী পাল তোলা নৌকা

মুঃ শফিকুল ইসলাম (নিজস্ব প্রতিনিধি)
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২২
  • ১৬৯ বার পঠিত

সময়ের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী পাল তোলা নৌকা

এক সময়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নদীগুলোতে সারি সারি পাল তোলা নৌকা চোখে পড়লেও সময়ের বিবর্তণ, আর নদীর নাব্যতা হারিয়ে জৌলুস হারানো নদ-নদীর করুণ অবস্থা, আর যান্ত্রিক সভ্যতা বিকাশের ফলে বিলুপ্তির পথে আবহমান গ্রাম-বাংলার লোকসংস্কৃতির অন্যতম ধারক ঐতিহ্যবাহী পাল তোলা নৌকা। হাতে গোনা দু’একটা পালের নাও, বাদামী নাও চোখে পড়লেও তাদের নৌকায় আগের মতো আর মানুষ ওঠে না। নতুন বধূ শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য পাল তোলা নৌকার বায়না আর ধরে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বেশির ভাগ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ছিল নদী আর পালের নৌকা, ডিঙ্গি নৌকাসহ বিভিন্ন নৌকার সম্পর্ক। বিশ থেকে পঁচিশ বছর আগেও পদ্মা, মহানন্দা, পূণর্ভবা ও পাগলা নদীর নৈসর্গ রূপের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছিল সারি সারি নৌকা। এসব নৌকায় ছিল রঙিন পাল। স্বচ্ছ পানির কলতান আর পালে লাগা বাতাসের পত পত শব্দ অনুভূতি জুগিয়েছে প্রাণে। পালতোলা নৌকায় নদী ভ্রমণে যতটা না তৃপ্ত হতো মন তার চেয়ে দূর পদ্মা, মহানন্দা, পূণর্ভবা ও পাগলা পাড় থেকে সারি সারি নৌকার ছন্দবদ্ধ চলা আর বাতাসে পাল উড়ার মনোরম দৃশ্য দেখে মনপ্রাণ আনন্দে নেচে উঠেছে। নদীগুলোর বুক চিরে বয়ে চলা পাড়ে দল বেঁধে মানুষ পালতোলা নৌকার সে দৃশ্য দেখে চোখ জুড়ায়ি আসতো। আর মাঝনদী থেকে ভেসে আসা দরাজকণ্ঠে ভাটিয়ালি গানের সুর শুনে মনে তৃপ্ত এনে দিতো। নদীকে ঘিরে এক সময় পালতোলা নৌকা ছিল যাতায়াতের মাধ্যম। এপাড় থেকে ওপাড়ের যাত্রীদের ভাসিয়ে নিয়ে যেত নৌকা। তবে কালের পরিক্রমায় এসব নৌকা এখন অতীত। এখন নদীতে যেটুকু সময় পানি থাকে বিশেষ করে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে নৌকা চলাচল করে। পালতোলা নৌকার দেখা মিলে না। এক সময় সাম্পন, যাত্রীবাহী গয়না, একমালাই নৌকা, কোষা নৌকা, ছিপনাও, ডিঙিনৌকা, পেটকাটা নাও, বোঁচা নাও সহ বিভিন্ন ধরণের পালের নাওয়ের ব্যবহার ছিল। যান্ত্রিক সভ্যতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে পালতোলা নৌকা। কদর নেই মাঝি-মাল্লাদেরও। নৌকায় পাল এবং দাঁড়-বৈঠার পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে ডিজেলচালিত ইঞ্জিন। মাঝেমধ্যে দু’একটা পালের নাও এখনো নদ-নদীতে দেখা যায়। পালের নাওকে উপজীব্য করে যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিকরা রচনা করেছেন তাঁদের অমূল্য সৃষ্টি কবিতা, ছড়া, গল্প, গান পালা ইত্যাদি। প্রখ্যাত শিল্পীরা তৈরি করেছেন উঁচু মানের শিল্পকর্ম। শুধু দেশী কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী বা রসিকজনই নন বরং বিদেশী অনেক পর্যটকের মনেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে পালের নাও। বিভিন্ন আকার ও ধরণের নৌকাই ছিল মানুষের যাতায়াত ও পরিবহনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। আর এ সব নৌকা চালানোর জন্য পালের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। হাজারীপাল, বিড়ালীপাল, বাদুরপাল ইত্যাদি পালের ব্যবহার ছিল নৌকাগুলোতে। পালের নৌকার পাশাপাশি মাঝিদেরও বেশ কদর ছিল একসময়। প্রবীণ মাঝিরা নৌকা চালানোর বিভিন্ন কলাকৌশল সম্পর্কে বেশ পারদর্শী ছিলেন। তাঁদের হিসেব রাখতে হতো জোয়ার-ভাটার, বিভিন্ন তিথির এবং শুভ-অশুভ ক্ষণের। কথিত আছে, বিজ্ঞ মাঝিরা বাতাসের গন্ধ শুঁকে বলে দিতে পারতেন ঝড়ের আগাম খবর। রাতের আঁধারে নৌকা চালানোর সময় দিক নির্ণয়ের জন্য মাঝিদের নির্ভর করতে হতো আকাশের তারার উপর। তাই আগেভাগেই শিখে নিতে হতো কোন তারার অবস্থান কোন দিকে। বয়োবৃদ্ধরা জানান, “নৌকাই ছিলো আদি বাহন। যুগের চাহিদা অনুযায়ী ইঞ্জিন নৌকা বা ট্রলারেরও আবেদন রয়েছে। তাই বলে গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ভুলে গেলে চলবে না। সেই নৌকাগুলোর কদরও যাতে সব সময় থাকে তারও একটা ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে। আধুনিক নগর সভ্যতার যুগে যান্ত্রিক যানবাহনের ভারে হয়তো হারিয়েই যাবে আমাদের লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী পালের নাও। হাতে গোনা দু’একটা চোখে পড়লেও তাদের নৌকায় আগের মতো আর মানুষ ওঠে না। নতুন বধূ বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য পালতোলা নৌকার বায়না ধরে না। আগে ঘাটে সারি সারি পালতোলা নৌকা বাঁধা থাকতো। এখন সেই ঘাট দখল করে নিয়েছে শ্যালো ইঞ্জিলচালিত নৌকা। এসব নৌকার ভট ভট বিকট শব্দে নদীর শান্ত পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। কালের আবর্তে এক সময় পরবর্তী প্রজন্মের শিশুরা ভুলে যাবে, ‘পালের নাও, পালের নাও, পান খেয়ে যাও ইত্যাদি ছড়া। বিচিত্র রঙের পালের বাহারিতে ঝলমল করবে না, এ দেশের নদ-নদী, খাল-বিল।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
Copyright All rights reserved © 2024 Chapaidarpon.com
Theme Customized BY Sobuj Ali
error: Content is protected !!