সাত বছর বয়সে জ্বর হয়। জ্বর ছিল বেশ কয়েকদিন। অর্থাভাবে ভাল চিকিৎসা হয়নি। হাসপাতালের ঔষধ খেয়ে জ্বর থামলেও তার দুই হাত আর দুই পা অবশ হয়ে যায়। সেই থেকে বাইরের আলো দেখা হয়না রজনীর। তবে, এমন একজন প্রতিবন্ধী শিশুর হয়নি প্রতিবন্ধী কার্ড বা ভাতার ব্যবস্থা। বর্তমানে প্রতিবন্ধী রজনী বাস করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলবাগান বস্তির একটি জরাজীর্ণ স্যাঁতসেঁতে ঘরে। এমনভাবে জীবন যাপন অনেকটায় দূর্বিসহ করে তুলেছে রজনীকে। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই। রজনীর বয়স যখন চার বছর তখন তার বাবা তাকে ও তার মাকে ফেলে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যায়। রজনী যখন নয় বছরের তখন তার মার বিয়ে হয় অন্যত্র। তখন থেকেই নানী লাইলীর কাছে থাকে রজনী। নানী যখন অন্যের বাড়ী কাজ করতে যায় তখন পুরো বাড়িতে একা। রজনীর বয়স এখন ১৪। নানী লাইলীই তার বন্ধু, তার পৃথিবী। রজনী লেখাপড়া করতে চায়, স্কুলে যেতে চায়, বাইরে গিয়ে সমবয়সীদের সাথে খেলতে চায়। কিন্তু একা চলতে পারেনা। নানী অন্যের বাসায় কাজ করে তাই তাকে বাইরে নিয়ে যাবার কেউ থাকেনা। চোখের কোনের অশ্রু লুকিয়ে রজনী জানায়, যখন নানী বাড়িতে থাকেনা তখন টিভি দেখেই তার সময় কাটে। রজনী আরও জানায়, সে যখন অসুস্থ্য হয় তখন তার পিতা ইমরান আলীকে মোবাইল (নানীর মোবাইল) করলে তাকে তার পিতা গালিগালাজ করে এবং সে তার মেয়ে নয় বলে জানায়। তবে তার মা সুমী মাঝে মাঝে দেখতে আসে। তখন তার খুব ভাল লাগে। রজনীর নানী লাইলী জানায়, ৪০ বছর আগে তাকে ছেড়ে তার স্বামী অন্যত্র বিয়ে করে চলে যায়। তখন থেকে রজনীর মাকে নিয়ে সে সংগ্রাম করে টিকে আছে। কিন্তু অভাব তার পিছু ছাড়েনি। মেয়ে সুমীর বিয়ে দেয় পার্শ্ববর্তী ইমরানের সাথে। নাতনী রজনী হবার চার বছর পর জামাইও মেয়েকে ছেড়ে দেয়। মেয়ে সুমীর দ্বিতীয় বিয়ে দেয়ার পর থেকে সে নাতনী রজনীকে নিয়ে রেলবস্তীর বাসায় থাকে। লাইলী জানায়, স্বামী পরিত্যক্তের কাগজ না থাকায় সে ভাতা পায়না। অনেক ছুটাছুটির পরও নাতনী রজনীর প্রতিবন্ধীর ভাতাও করতে পারেনি। পরের বাড়ী কাজ করে কোনরকমে সংসার চলে। টাকা না থাকায় রজনীর চিকিৎসা ঠিকমত করতে পারেনা। গত শনিবার জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসে সমাজসেবা অফিস থেকে রজনীকে একটি হুইল চেয়ার দিয়েছে বলে জানায় লাইলী। লাইলী ও রজনীর ভাতার কার্ডের বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-৩ নাজনিন ফাতেমা জানান, শীঘ্রই তাদের ভাতা চালুর ব্যবস্থা করা হবে। জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক উম্মে কুলসুম জানান, তাদের শহর সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।