পারিবারিক কারন দেখিয়ে মাত্র তিন দিনের ছুটি নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু রেজা তালুকদার ৭ মাস ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন। ফিরে আসেননি অফিসে ৭ মাস ধরে। ফলে সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। দফায় দফায় লিখিত তলব করেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, তারপরও হদিস মেলেনি। প্রায় ৭ মাসে একদিনও কর্মস্থলে উপস্থিত হননি সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু রেজা তালুকদার। তিন দিনের ছুটি তিন মাস গড়ানোর মধ্যেই বদলির আদেশ দেয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর। নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করে অনুপস্থিত থাকেন তিনি। অদ্যাবধি শুন্য রয়েছে সদর উপজেলা সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চেয়ার। বিভাগীয় ও জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়, সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও একাধিক সূত্রে জানা যায়, ডা. মো. আবুরেজা তালুকদার গত বছরের আগস্টের ১৫ থেকে ১৭ তারিখ মোট তিন দিনের ছুটি নিয়ে ছিলেন। পারিবারিক জরুরি কাজ জানিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করেন।
১৭ দিন পেরিয়ে গেলে সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখে গণকর্মচারী শৃঙ্খলা (নিয়মিত উপস্থিতি) অধ্যাদেশ, ১৯৮২ অনুযায়ী কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান। একইসঙ্গে বিভাগীয় ও প্রাণিসম্পদ মহাপরিচালক বরাবর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি। কিন্তু কোনো সদুত্তর মেলেনি। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের ১৪ আগষ্ট সর্বশেষ অফিস করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবুরেজা তালুকদার। এরপর তার মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য পারিবারিক কারন দেখিয়ে তিন দিনের ছুটি নেন। তবে কি কারনে গত ৭ মাস অফিসে অনুপস্থিত না নিশ্চিত করে কেউই বলতে পারেননি। এদিকে, দীর্ঘ ৭ মাস পর চলতি বছরের ১৩ মার্চ অফিসে এসেছিলেন আবুরেজা তালুকদার। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের অফিস সহকারী তরিকুল ইসলাম বলেন, গত ৭ মাসে একদিনও অফিসে আসেননি ইউএলও মো. আবু রেজা তালুকদার স্যার। কি কারনে বা কেন আসেননি তা আমরা বলতে পারব না।
তবে তার অনুপস্থিতির কারনে একটি প্রকল্পের পুরো অর্থ ফিরে গেছে। এছাড়াও বাধাগ্রস্থ হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ। এলএইও ডা. শামীমা নাসরিন জানান, স্যার গত বছরের আগস্টে তিন দিনের ছুটি নিয়ে এখন পর্যন্ত একদিনও অফিস করেননি। প্রকল্পের কাজ যখন আটকে গিয়েছিল তখন ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. আখতারুজ্জামান স্যারকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি কাজগুলো করিয়ে নেন। আমরা এভাবেই কাজ করে যা”িছ সমস্যার মধ্য দিয়ে। স্যার কোথায় আছেন, কেন আসেননি আমরা তা জানি না। ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ২০২২ সালের ১৪ আগষ্ট স্যার (আবুরেজা তালুকদার) সর্বশেষ অফিস করেছেন। এরপর গত ১৩ মার্চ হঠাৎ করেই দীর্ঘ ৭ মাস পর অফিসে এসেছিলেন। এরপর গত কয়েকদিনে আর আসেননি।
এমনকি এই ৭ মাসের মধ্যে তার বদলীর আদেশ হলেও এখানকার চার্জ বুঝিয়ে দেননি। ১৩ মার্চ এসে অনুপস্থিতির কারন জানিয়ে ছুটির আবেদন করেছেন বলে জানতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, তার অনুপস্থিতির কারনে অফিসের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সকল কার্যক্রম বন্ধ ছিল। গত ০৪ মার্চ থেকে যা আমি করছি। ১৪ আগষ্টের পর দীর্ঘ এক মাসের অধিক সময় তার উপস্থিতির (হাজিরা) সাক্ষরের স্থান ফাঁকা ছিল। পরে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার নির্দেশে আমি তার হাজিরার জায়গায় সাক্ষর করছি। আমার কাজ মূলত চিকিৎসা প্রদান করা হলেও তার অনুপস্থিতির কারনে অনেক অফিসিয়াল কাজ করতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে। এবিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবুরেজা তালুকদার ফোন রিসিভ করেননি। পরে তিনি নিজেই ফোন দিলেও সাংবাদিক পরিচয় শোনার পর ফোন কেটে দেন। পরে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডা. মো. আবুরেজা তালুকদারের বিষয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের আগস্টের ১৫ থেকে ১৭ তারিখ মোট তিন দিনের ছুটি নিয়ে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত ছিলেন। চলতি মার্চ মাসের ১৩ তারিখে যোগদান করে আবার ছুটি নিয়েছেন। দীর্ঘ সময়ে একদিনের জন্যও চেয়ারে বসেননি। তাকে বারবার নোটিশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তিন দিনের ছুটি নিয়ে দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির কারনে তার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট বহুবার অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এমন আচরণের কারনে গতবছরের নভেম্বর থেকে তার বেতন বন্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। এমনকি তার একটি প্রমোশনও আটকে দেয়া হয়েছে। চাকুরিবিধি অনুযায়ী তার সর্বো”চ শাস্তি হয়েছে। তবে কি কারনে অনুপস্থিত ছিলেন, তা এখনও জানতে পারিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. নজরুল ইসলাম জানান, ডা. মো. আবুরেজা তালুকদার বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত আছেন। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান একাধিকবার নোটিশ ও কৈফিয়ত তলব করেছেন, তাতেও কোনো কাজ হয়নি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত হওয়ার কোনো নিয়ম নেই। এ জন্য তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে। যদি সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যা দিতে না পারেন, তাহলে দপ্তরের নিয়মানুযায়ী শাস্তি প্রদান করা হবে।