মজুরি বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নারী শ্রমিকরা। দশকের পর দশক চলছে এ প্রথা। কৃষি জমিতে সমান কাজ করলেও নারীদের মজুরি পেতে হয় পুরুষের চেয়ে অনেক কম। অভাবের তাড়নায় প্রতিদিন কম মূল্যে শ্রম দিচ্ছেন ওই নারীরা। এই বৈষম্য দূর করে সমতা চান জেলার নারী শ্রমিকরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিমের বিল বৈলঠা গ্রামের মালতি মুর্মু (৬৩) কৃষি জমিতে কাজ করেন। তিনি বলেন, শুরু থেকেই এই বৈষম্য দেখে আসছি। কোনো উপায় না থাকায় বাধ্য হয়েই জীবিকার প্রয়োজনে আমাদের অন্যের জমিতে কাজ করতে হয়। বিভিন্ন বাগান ও নার্সারিতে কর্মরত নারীদের দেয়া হচ্ছে ২৫০ টাকা করে, যেখানে পুরুষ শ্রমিকরা পাচ্ছেন ৩০০ টাকা।
বৈলঠা গ্রামের কোল সম্প্রদায়ের ৪৪ বছর বয়সী নিরাসি টুডু। তিনি ১৩ বছর থেকে কাজ করেন কৃষি জমিতে। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি মজুরি বৈষম্যের শিকার। তিনি বলেন, সাধারনত কাজ পাওয়া যায়না, যখন কাজ পাওয়া যায় তখন কাজ করি। নারীদের ২৫০ টাকা, আর পুরুষ শ্রমিকদের ৩০০ টাকা করে দৈনিক মজুরি দেয়া হয়। সমান কাজ করলেও নারীদের মজুরী কম। পেটের দায়ে এই বৈষম্য মেনে নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। মরিণ একটি নার্সরীতে কাজ করেন। স্বামি হারিয়ে পরিবারে উপর্জনের আর কেউ নেই। অভাবের কারণে বাধ্য হয়েই অন্যের জমিতে কাজ করতে হচ্ছে। দৈনিক কাজ করে টাকা ২৫০ টাকা পাই। পুরুষের চেয়ে ৫০ টাকা কম পেলেও কিছু করার নেই। এক নার্সারির মালিক আবুল কাসেম বলেন, নারীরা কৃষি-কাজে বেশ পারদর্শী।
তারা চারা লাগানোর পর তা ভালো করে পরিচর্যা করতে পারেন। পুরুষরা পায় ৩০০ টাকা এবং নারীরা পায় ২৫০ টাকা। এখানে যেটা প্রচলন, সেটায় তাদের দেয়া হয়। ওই এলাকার এক শিক্ষক সারদা রানী হাসদা বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বিলবৈলঠা, চটিগ্রাম, চাত্রা, ফিল্ডিপাড়া ও বৈলঠা গ্রামে প্রায় ৩০০ এবং রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং ও শান্তিপাড়া গ্রামে প্রায় ২০০ কোল রিবার বসবাস করে। প্রায় সব নারী শ্রমিক হিসেবে অন্যের জমিতে কাজ করেন। দীর্ঘদিন থেকেই তারা মজুরি বৈষম্যের শিকার। এর একটা সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি হিংগু মুর্মু বলেন, জেলায় সাঁওতাল, ওরাঁও ও কোলসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রায় এক লাখ মানুষ চাঁপাইনবাবগঞ্জে বসবাস করেন। এই সব সম্প্রদায়ের নারীরা জমিতে কাজ করেন, তারা কাজে ফাঁকি দেন না এবং দক্ষ। তারপরও নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসাঃ সাহিদা আখতার বলেন, ‘লিঙ্গ বৈষম্য না কমলে, মজুরি বৈষম্যও কমবে না। নারীরা অনেক এগিয়েছে। তবে, মজুরি বৈষম্য এখন আগের চেয়ে অনেক কমেছে। আশা করছি ভবিষ্যতে মজুরি বৈষম্য কমবে। তিনি বলেন, এক সময় হয়তো নারী-পুরুষ শ্রমিকদের মাঝে কোন মজুরী বৈষম্যই থাকবে না।