বগুড়া জেলা কারাগার থেকে মঙ্গলবার গভীর রাতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি ছাদ ফুটো করে পালিয়ে যায়। বুধবার সকালে তাদের কারাগারের আশপাশের এলাকা থেকে আটক করা হয়।
আটকের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন বগুড়া জেলা প্রসাশক সাইফুল ইসলাম। পালিয়ে যাওয়া কয়েদীরা হচ্ছে, কুড়িগ্রামের নজরুল ইসলাম (৬৮), নরসিংদীর মো. আমির হামজা (৪১), বগুড়ার মো. জাকারিয়া (৩৪), মো. ফরিদ শেখ (৩০)। প্রেস ব্রিফিং ডেকেছেন বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৪ কয়েদি জেলা কারাগারের ছাদ ফুটো করে ও দেয়াল টপকে পালানোর চেষ্টা করলে কারা পুলিশ বিষয়টি টের পায়। এরপর তাদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বগুড়া জেলা কারাগারের ছাদ ফুটো করে পালিয়ে যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৪ কয়েদী। মঙ্গলবার (২৫ জুন) দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। বুধবার (২৬ জুন) ভোর ৪টার দিকে শহরের চেলোপাড়া চাষি বাজারের সামনে থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ৪ আসামি হলেন- কুড়িগ্রামের নজরুল ইসলাম মঞ্জু, নরসিংদীর মো. আমির হামজা, বগুড়ার ফরিদ শেখ ও মো. জাকারিয়া। চার আসামি পালিয়ে যান সে বিষয়ে বিস্তারিত জানান বগুড়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) সাইফুল ইসলাম। ডিসি সাইফুল ইসলাম বলেন, বগুড়া কারাগারটি অনেক পুরাতন। এটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি। দেখা গেছে ভবনের অনেক স্থান নাজুক। ওই চার আসামিকে এ বছরের ১ জুন এখানে নিয়ে আসা হয়। তাদের একই সেলে রাখা ছিল। তারা আসার পর আমি পরিদর্শনেও গিয়েছিলাম। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ছাদ ফুটো করে তারা চারজন পালিয়ে যায়। পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ওরা ছাদের যে অংশে ফুটো করেছে সেখানে কোনো রড ছিল না। এসব স্থান সংস্কারের কথা বলেছি।
এছাড়া আসামিরা যেদিক দিয়ে পালিয়ে গেছে সেখানে নিরাপত্তা চৌকি স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ঘটনার রাতে তারা নিজেদের বিছানার চাদর ছিড়ে দড়ি বানায়। এরপর গামছার ভেতর শক্ত কিছু ভরে কৌশলে কারাগারের ছাদ ফুটো করে সেলের বাইরে বের হয়। আগে থেকে বানানো বিছানার চাদরের দড়ি দিয়ে কারাগার ভবন থেকে নিচে নামে। এরপর ওই চারজন কারাগারের পূর্ব পাশে করতোয়া নদীর ওপর ছোট ব্রিজের নিচ দিয়ে পালিয়ে যায়। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টা ৫৬ মিনিটে খবর আসে বগুড়া জেলা কারাগার থেকে চারজন মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত আসামি পালিয়ে গেছে। এই খবর পাওয়া মাত্র বগুড়া সদর থানা ও ফাঁড়ির পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে। তারা শহরের বিভিন্নস্থানে একাধিক অভিযান পরিচালনা শুরু করে। অভিযানের এক পর্যায়ে ভোর ৪টা ১০ মিনিটের দিকে সদরবাড়ীর উপ-পরিদর্শক (এসআই) খোরশেদ আলম শহরের চেলোপাড়ায় করতোয়া নদীর পাড়ে চাষি বাজার থেকে চারজনকে আটক করেন। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হওয়া যায় এই চারজনই কারাগার থেকে পালানো সেই চার আসামি। এরপর তাদেরকে ডিবি অফিসে নিয়ে আসা হয়। জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ঘটনা জানা মাত্রই খুব দ্রুততম সময়ে আমাদের পুলিশ সদস্যরা চার আসামিকে আটক করতে সক্ষম হন। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি এম ইমরুল কায়েসকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।