চাহিদার তুলনায় অনেক কম টিকিট ও ট্রেন হওয়ায় টিকিট সংকটে ভুগছেন যাত্রীরা। ট্রেনে যাতায়াত অনেকটায় নিরাপদ ভেবে ট্রেনে ভ্রমন করতে চাইলেও প্রয়োজনীয় টিকিট বা ট্রেন পাচ্ছেন না চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণ এবং যাত্রীসাধারণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে রেল কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন জেলাবাসী। জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা যাতায়াতের জন্য শুধুমাত্র বনলতা ট্রেন চলাচল করছে। এ ট্রেনে চাহিদার তুলনায় কম টিকিট বরাদ্দ থাকায় বেড়েছে ভোগান্তি। ঢাকা যাতায়াতকারী যাত্রীদের অভিযোগ, অনলাইনে ট্রেনের টিকিটি কাটা যাচ্ছেনা। যারা অনলাইনের মাইর প্যাঁচ বোঝে, তারাই ট্রেনের টিকিট পাচ্ছে। দীর্ঘ লাইন হওয়ায় টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনাও খুব কম। করোনা কালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন থেকে মোট ৫টি ট্রেন বন্ধ হলেও, ইতোমধ্যে মাত্র একটি ট্রেন চালু হয়েছে। বন্ধ থাকা ট্রেনগুলো পুণরায় চালু হলে ভোগান্তি কমবে যাত্রীদের বলে মনে করেন জেলার সচেতন মহল। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সুত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত বনলতা ট্রেন চলাচল করে নিয়মিত।
ট্রেনটিতে এ জেলার জন্য মোট ১৯৬টি টিকিট বরাদ্দ। এরমধ্যে ঢাকা গমনেচ্ছুরা স্টেশন থেকে ৯৮টি আর অনলাইন থেকে বাকি ৯৮টি টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। উসমান আলী, পেশায় তিনি ব্যাংকার। ট্রেনের টিকের জন্য দাড়িয়ে ছিলেন লাইনে। কিন্তু ঘন্টা তিনেক দাড়িয়ে টিকিট না পেয়ে হতাশ তিনি। ক্ষোভের সাথে এই ব্যাংকার বলেন, অনলাইনে ট্রেনের টিকিটি কাটা যাচ্ছেনা। অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টা করেছি, কোন লাভ হয়নি। পরে রেল স্টেশনে এসে দেখি লম্বা লাইন। কিন্তু প্রায় ৩ ঘন্টা দাড়িয়ে থাকার পরেও টিকিট পেলাম না। চাহিদা থাকার পরেও রেল কতৃপক্ষ টিকিটের পরিমাণ বাড়াচ্ছেনা। সেরাজুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন; অনলাইনে অনেক দিন টিকিট কাটার চেষ্টা করেছি, পারিনি। যারা অনলাইনের মাইর প্যাঁচ বোঝে, তারা টিকিট কাটতে পারছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ট্রেনে করে ঢাকা যাওয়া এখন স্বপ্ন। এ স্বপ্ন বাস্তবে রুপ দিতে গেলে, সন্ধা থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। টিকিট তো কম, লাইনে দাঁড়ালে টিকিট পাওয়া যাবে কিনা তাও সন্দেহ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার পথে শুধুমাত্র বনলতা ট্রেন চলায় টিকিটের সঙ্কট হয়েছে। করোনা কালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে মোট ৫টি ট্রেন বন্ধ করা হয়। ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জ মেইল চালু হলেও স্যাটল-২, স্যাটল-৪, রাজশাহী লোকাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রহনপুর লোকাল মোট ৪টি ট্র্রেন বন্ধ রয়েছে। এ ট্রেনগুলো চালুর দাবি জেলাবাসীর। বন্ধ ট্রেনগুলো চালু করার জন্য একাধিক কর্মসুচিও পালন করেছে জেলার জনগণ। কিন্তু দাবিগুলো পুরন হচ্ছে না। সাইফুল নামের এক শিক্ষক বলেন, সড়ক পথে যাতায়াতের চেয়ে রেল পথে চলাফেরা করতে ভালোলাগে এবং নিরাপদ। আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে একাধিক ট্রেন বিভিন্ন রুটে চলাচল করতো। তেমন ভোগান্তি হতোনা। কিন্তু এখন ট্রেন কম, যেগুলো যাতায়াত করে সবগুলো সকালে। বেলা ১১টার পর আর কোন ট্রেন নাই, সব বন্ধ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান মনির বলেন, এ জেলার রেল ব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে। জেলায় আধুনিক রেলস্টেশন, বাইপাস লাইন নির্মাণ করেছেন, অথচ করোনাকালে বন্ধ করা ট্রেনগুলো আর চালু করা হয়নি, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, আশপাশের সব জেলার মানুষ ৪-৫টি আন্তঃনগরসহ বিভিন্ন ট্রেনের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিরাপদে যাতায়াত করতে পারছেন। কিন্তু ট্রেনগুলো বন্ধ থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের যাত্রীরা রেল সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ট্রেনগুলো চালু হলে যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাষ্টার ওবাইদুল্লাহ বলেন, ঢাকা যাওয়ার জন্য এ জেলার জন্য মোট ১৯৬টি টিকিট বরাদ্দ রয়েছে। তারমধ্য থেকে ৯৮টা স্টেশন থেকে সংগ্রহ করা যাবে, বাকিগুলো অনলাইন থেকে সংগ্রহ করতে হবে। টিকিট কমবেশি করার এখতিয়ার আমরা রাখিনা। আমাদেরকে উর্ধতন কর্মকর্তারা যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সে মোতাবেকই কাজ করতে হয়। ওবাইদুল্লাহ বলেন, ‘আবডাউনসহ মোট ৪ জোড়া ট্রেন বন্ধ আছে। এ ট্রেনগুলো কবে নাগাদ চালু হবে আমাদেরকে কিছুই জানাই নি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এ ট্রেনগুলো চালু হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাবাসীর জন্য অনেক উপকার হবে। রাজশাহী রেলওয়ের (পশ্চিমাঞ্চল) প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, রেলের লোকবল সঙ্কট থাকায় বন্ধ হওয়া ট্রেনগুলো চালু হচ্ছেনা। শিগগির যথাযথভাবে লোকবল নিয়োগ দিয়ে বন্ধ হওয়া ট্রেনগুলো চালু করা হবে।