♦ উত্তম কুমার, গোমস্তাপুর
যুগে যুগে মানুষের মধ্যে কেউ এমন থাকে যার উৎসর্গতা ও সান্নিধ্যে মানব সমাজের বিবর্তন ঘটে। তবুও অদৃশ্যেই থাকে এই মানুষদের মহানুভবতা। যেমন টি দেখা গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত শ্রী শ্রী শ্যাম রায় দেব বিগ্রহ (মহন্ত স্টেট)’র মহন্ত মহারাজ ক্ষিতিশ চন্দ্র আচারী কে। বলতে গেলে উনার মহানুভবতা শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় নয় দেশজুড়েও লক্ষ্য করা যায়। তিনিই প্রথম এশিয়া মহাদেশের মধ্যে একমাত্র বাঙালী এবং মহন্ত স্টেটের ১৩ তম মহন্ত মহারাজ। তিনি তার দর্শনে উপলব্ধি করেন, ‘আমি তো আামার নয়’- যা কিছু দেখছেন সব কিছুই শ্রী শ্রী শ্যামরায়ের, আমি পাহারাদার মাত্র। বস্তুত, তার দর্শন ভাবনা আধ্যতিক গুরুর মতো হলেও তিনি সংসারে বিরাজমান থেকে মানব সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে চান। তার এই উদারতা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বংশ সব কিছুরই উপর স্থান পেয়েছে। ৬৩ বছর বয়সী মহন্ত মহারাজ ক্ষিতিশ চন্দ্র আচারী গুরু পিতা মহন্ত হরিকরন আচারীর কৃপাধন্য ও গোমস্তাপুর উপজেলায় চৌডালার স্বর্গীয় নিত্যগোপাল ভট্টাচার্য ও বাসন্তী দেবীর ঘরে জন্ম গ্রহন করেন। তিন ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি বড় ছেলে। ছোট বেলা থেকেই অনেক ভাবুগে ও সাহসী প্রকৃতির ছিলেন তিনি। তৎকালীন চৌডালার ফড়িং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষা জীবন শুরু করে পরবর্তীতে স্টেট দেখা শুনার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে শিক্ষা জীবন সেভাবে আর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। তবে পড়াশুনাতেও তিনি ভাল ছিলেন না বলে অকোপটে স্বীকার করেন। তবে প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও মানবপ্রেমে একাগ্র ছিলেন। তিনি জানান, জাতিভেদ, ধর্মভেদ সাম্প্রদায়িকতা মানব সমাজের ধংসের কারন। তাই তিনি ছোট বেলা থেকেই এসবের প্রতিবাদী। তার এই একাগ্রতায় পূর্ববর্তী মহন্তকে আকৃষ্ট করে। সেই মহারাজের আশীর্বাদ স্বরূপ ক্ষিতিশ চন্দ্র আচারী মহান্ত স্টেটের দায়ীত্ব পান। ১৯৮৬ সালে তাকে মহান্ত স্টেটের পাওয়ার অফ অ্যাটর্নী দেয়া হয়। এভাবেই তিনি মহন্ত মহারাজ হিসেবে কাল ক্রমে ক্ষ্যাতি লাভ করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিয়ে করেন বৃহত্তর ফরিদপুরের এক জমিদার বাড়ীর মেয়ে রেখা দেবীকে। স্বর্গীয় গুরুপিতা মহান্ত হরিকরন আচারীর আশীর্বাদে তিনি এই বিয়েতে সম্মতি দেন এবং আজ পর্যন্ত ঘরের লক্ষীর মত সব কিছু আগলে আছেন রেখা দেবী আচারী। তিনি আরো জানান, বছরের পর বছর ধরে দেশ ও মানুষের সেবায় সর্বদা নিয়োজিত এই স্টেট। এই স্টেটের উৎসর্গ করা জমিতে নির্মিত হয়েছে বিমান বন্দর, স্টেডিয়াম, কোর্ট চত্বর, একাধিক মন্দির, মসজিদসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে, বৃটিশ আমল থেকে শুরু করে আজ অবধি বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে এই স্টেট পরিচালকদের। তবুও মহন্ত স্টেটের দরজা থেকে কেউ কখনো খালি হাতে ফেরত যাননি। জানা যায়, বৃটিশ আমলে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর ঢাকার চক বাজারে অনন্ত দাস মহন্ত মহারাজ আচারী ১১’শ সাত বাংলা সনে গড়ে তোলেন মহন্ত স্টেট। ৭১ সালে দেশ ভাগের পর বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে প্রধান কার্যালয় ছাড়াও ঢাকা, কুমিল্লা, লাকশাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জে পৃথক পাঁচটি স্টেট রয়েছে। প্রতিটি স্টেট দেখাশোনা করার জন্য একজন করে ম্যানেজার ও মন্দিরের আরাধনার জন্য একজন করে পুরোহিত নিয়োগ দেন। প্রতিটি স্টেটের আয়ের উপর সামাজিক উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজে ব্যয় করা হয়। তিনি আরো জানান, তাঁর চূড়ায় মহান, নয়নে বাবা মা ও অন্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উপলব্ধি করেন। একজন বঙ্গবন্ধু ছিল বলেই হয়তো তিনি একমাত্র বাঙালী হয়েও মহন্ত মহারাজ হয়েছেন।