ফেনীতে পূর্ব বিরোধের জেরে ছুরিকাঘাতে এক যুবককে এবং ধারাল অস্ত্র দিয়ে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ফেনী মডেল থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, শনিবার রাতে সদর উপজেলার কাজীরবাগ ইউনিয়নের রানীরহাট বাজার সংলগ্ন আলামিন একাডেমি স্কুলের সামনে এবং উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের পূর্ব কচুয়া গ্রামে মুহুরী নদীর পাড়ে এসব ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন-কাজীরবাগ ইউনিয়নের অশ্বদিয়া গ্রামের মো. বশির আহাম্মদের ছেলে মো. সুমন (২৩) ও মোটবী ইউনিয়নের পূর্ব কচুয়া গ্রামের আহসান উল্ল্যাহর ছেলে নেজাম উদ্দিন (৪৫)। পেশায় রাজমিস্ত্রী সুমনের পৈতৃক বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। সে তার পরিবারের সঙ্গে অশ্বদিয়া গ্রামের রিপনের কলোনিতে ভাড়া থাকতেন।
আর নেজাম ফেনী শহরে একটি বাড়িতে ভাড়া থেকে রাজাঝির দিঘির পাড়ে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। নিহত সুমনের ভাই মো. সোহেল বলেন, আমার ভাই কাজ শেষে সন্ধ্যায় রানীরহাট বাজারে বসে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিল। এ সময় সেখানে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে ছুরিকাঘাত করে।
পরে কয়েকজন যুবক তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসকরা সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন। সোহেল বলেন, কয়েকদিন আগে একটি বিরোধকে কেন্দ্র করে সুমনের সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার জেরে সুমনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হতে পারে। কাজীরবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগ বলছিলেন, “রানীরহাট বাজারে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে খুন করার খবর শুনেই ঘটনাস্থলে যাই। তবে তাৎক্ষণিকভাবে হত্যাকাণ্ডের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে পারিনি। ছেলেটির পরিবারের লোকজন বলছে, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে এ ঘটনা ঘটতে পারে। ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার (ইএমও) ডা. মোহাম্মদ রায়হান উদ্দিন বলেন, রাতে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। পরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করে মরদেহ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ফেনী মডেল থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, হত্যাকাণ্ডের কারণ তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাতেই চারজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এদিকে, মোটবী ইউনিয়নের পূর্ব কচুয়া গ্রামে মুহুরী নদীর পাড় থেকে নেজাম উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করা হয় বলে তার স্ত্রী সাদিয়া আক্তার জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা ফেনীতে একটি ভাড়া বাসায় থাকি। সম্প্রতি শাশুড়িকে দেখতে বাড়ি গিয়েছিলাম। শুক্রবার বিকালে আমার স্বামী বাড়ি থেকে বের হয়ে শহরে যান। সেখানে কাজ শেষ করে রাতে অটোরিকশা করে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু রাতে আর তিনি বাড়ি ফেরেননি। পরদিন স্থানীয়রা বাড়ির পাশে মুহুরী নদীর পাড়ে তার রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। দুই বছর ধরে নেজামের সঙ্গে তার ভাই আলমের জমিজমা নিয়ে পারিবারিক বিরোধ চলছিল বলে মোটবী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন। তিন মাস আগে ইউপি চেয়ারম্যান সালিশের মাধ্যমে দুই ভাইয়ের বিরোধের মীমাংসা করে দেন। তারপর থেকে অবশ্য তাদের মধ্যে আর কোনো বিবাদ হয়নি বলেই জানি। ফলে কী উদ্দেশ্যে নেজামকে হত্যা করা হয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। ফেনী মডেল থানার এসআই পলাশ চৌধুরী বলেন, নেজামের ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের কোপের গভীর দাগ রয়েছে। তার ডান বাহুর পেছনের অংশে ও কনুইয়ের পেছনের দিকেও কোপ মারার দাগ রয়েছে। ওসি শহিদুল বলেন, ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।