ফসলের মাঠের পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ যেদিকে তাকাই শুধু দু-চোখে হলুদ আর হলুদ ফুলের সমারোহ। ষড় ঋতুর এই দেশে শীতকালের অগ্রহায়ণ মাস আসলেই ফসলের মাঠ যেন হলুদে হলুদে ভরে যায়। অনেকেই এই সরিষা ফুলের মাঠে মৌমাছি চাষ করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছে। তাই এ সময় মাঠে সরিষা ফুলের পাপড়িগুলোতে মৌমাছির উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে। এমন চিত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠে। সরজমিনে উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের আলমপুর নরোশিয়া, ঘাটনগর মহানন্দা নদীর পাড়, গোমস্তাপুর ইউনিয়নের নয়াদিয়াড়ী গ্রামের বিল দামুস, রহনপুর ইউনিয়নের বংপুর, আসানপুর ও পার্বতীপুর ইউনিয়নের দেওপুরা ও বড়দাদপুরে সরিষা ফুলের ব্যাপক চাষ দেখা গেছে।
সরিষা চাষী হাবিবুর রহমান এর সাথে কথা হলে প্রতিবেদককে তিনি জানান, বোয়ালিয়া ইউনিয়নের আলমপুর মৌজার প্রায় ১০ কাঠা জমিতে বারি সরিষা-১৪ জাতের সরিষা বপন করেছি। কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও আল্লাহর রহমতে এখন পর্যন্ত সরিষা গাছ খুব ভালো রয়েছে। গত বছরের থেকে এ বছর আশা করছি ভালো ফলন পাব। তিনি আরও বলেন, চলতি বছরে আগের বছর গুলোর চেয়ে এবার আবাদ তুলনামূলক অনেক ভালো হয়েছে। কারণ এখন বর্তমানে তেলের দাম অনেক বেশি হওয়ায় কৃষি অফিস চাষীদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। এছাড়াও বিভিন্ন পরামর্শ, জৈব সার, প্রশিক্ষণ ও বীজ দিচ্ছে। একই মৌজার আরও এক চাষী নজরুল ইসলাম জানান, আমি একজন সাবেক সেনা সদস্য। কৃষিকে আমি মনে প্রাণে ধারণ করে অনেক আগে থেকেই ভালবাসি। তাই চাকরির বয়স শেষ করেই কৃষি কাজে নিয়োজিত হয়েছি। আমার ১০ শতাংশ দেশী জাতের সরিষা বপন করেছি। সরিষাতে এবার কৃষি অফিসের সহযোগিতায় জৈব সার ব্যবহার করে সরিষার ফলন বেশি হবে এমনটাই আশা করছি। বাংলাদেশ যেহেতু কৃষি প্রধান দেশ, তাই আমি বেকার ভাইদের পরামর্শ দিব, কৃষি কাজে নিয়োজিত হওয়ার জন্য। কৃষি হলো একটি সম্ভাবনাময় পেশা। পার্বতীপুর ইউনিয়নের দেওপুরা গ্রামের চাষী জামাল উদ্দিন জানান, এবার আমি বর্গা নিয়ে ১২ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। আগের থেকে এবার সরিষার গাছ খুব ভালো হয়েছে। আর কিছুদিন পর আমার সরিষা গাছের ফুল ফুটবে। এবার ১ বিঘাতে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ২’শ টাকা মত খরচ হয়েছে। আশা করছি বিঘা প্রতি ৭ থেকে ৮ মণ করে পাব। গোমস্তাপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা তানভির আহমেদ সরকার জানান, ‘চলতি বছরে এ উপজেলায় ৪ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। যা গত বছর ছিল ২ হাজার ৫৪০ হেক্টর। এবার ২হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ বেশি হয়েছে। বারি সরিষা-১৪ জাতের এবার চাষাবাদ বেশী হয়েছে। চলতি বছরে ৪ হাজার ৬০০ জন কৃষককে ৬১৩.৩৩ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের জন্য সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্প সরিষা প্রদর্শনী ও ফলোআপ প্রদর্শনী থেকে ৬২৮ বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে।