1. tohidulstar@gmail.com : sobuj ali : sobuj ali
  2. ronju@chapaidarpon.com : Md Ronju : Md Ronju
কোচিং সেন্টারের পোষ্টারে ছেয়ে গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর ॥ নষ্ট শহরের সৌন্দর্য - দৈনিক চাঁপাই দর্পণ
সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রকৃতি ও জীবন ক্লাবের বৃক্ষরোপন ও চারা বিতরন কর্মসূচী প্রথমবারের মত ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ ভারতে ইলিশ উপহার হিসেবে যাচ্ছে না ॥ হচ্ছে রপ্তানী-পরিবেশ উপদেষ্টা নরসিংদীতে ডোবা থেকে ৫৮২ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী শিবগঞ্জে যুব ও স্বেচ্ছাসেবকদলের ২ নেতা জখমের ঘটনায় গ্রেপ্তার-১ শিবগঞ্জে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের মানববন্ধন পোরশায় গাঙ্গুরিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ সিরাজগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত ১০ ১৩ বছর পর চাকরি ফেরত পেলেন প্রধান শিক্ষক আত্রাইয়ে সাংবাদিকদের সাথে নবাগত ওসির মতবিনিময়

কোচিং সেন্টারের পোষ্টারে ছেয়ে গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর ॥ নষ্ট শহরের সৌন্দর্য

টুটুল রবিউল-নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১৬৩ বার পঠিত

মালিকসহ সচেতনদের ক্ষোভ

কোচিং সেন্টারের পোষ্টারে ছেয়ে গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর ॥ নষ্ট শহরের সৌন্দর্য

ডিসেম্বর বছরের শেষ মাস। পরীক্ষা শেষ। শিক্ষার্থীরা নতুন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি যুদ্ধে নামবে। এই সুযোগে নিজ নিজ প্রচারণায় নেমেছে কোচিং সেন্টারগুলো। কোচিং সেন্টারগুলোর নানা রঙের পোষ্টার/ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরের অলিগলির ওয়ালগুলো।

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, জেলা সদরের শান্তির মোড়, বিশ্বরোড় মোড়, টোলঘর এলাকা, বটতলা হাট, বাতেন খাঁর মোড়, প্রফেসর পাড়ার মোড়, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ এবং সরকারি মহিলা কলেজের গেট ও বাউন্ডারি ওয়াল, আব্দুল মান্নান সেন্টু মার্কেট, নিউ মার্কেটসহ জেলা সদরের সকল বিল্ডিং এবং ওয়ালসমুহ বাহারি পোষ্টারে সৌন্দর্য নষ্ট হয়েছে। অপরদিকে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সিভিল সার্জন কার্যালয়, নবাবগঞ্জ পৌরসভা, জেলা দায়রা জজ আদালত ভবনের ওয়ালেও এসব পোষ্টার দেখা যায়। শুধু কোচিং সেন্টারের নয়, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক, কবিরাজ, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের পোষ্টারও দেখা যায়। কোন কোন জায়গার অশ্লীল ও চটকদার পোষ্টারও দেখা যায়। বাদ যায়নি মহানন্দা ব্রীজ এর বারঘরিয়া প্রান্তে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ রাইফেলের উপর শান্তির পায়রা’র গোড়ার চারিদিকে নানা পোষ্টার লাগিয়ে সৌন্দর্য নস্ট করে রাখা হয়েছে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেও বিষয়টি নজরে আসেনি কোন কর্তৃপক্ষেরই।
প্রফেসর পাড়ার এক বাড়ির মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ছয়মাস পর পর দেয়ালে রং লাগায় আর মানুষ সেই দেয়াল পোস্টার দিয়ে ভরিয়ে দেয়। প্রতিদিন বারণ করা সত্ত্বেও দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে যায় দেয়াল দস্যুরা। বাড়ির মালিক আরও বলেন, যারা পোস্টার লাগিয়ে চলে যাচ্ছে, তাদেরতো কোনো লোকসান হচ্ছে না। লোকসান হচ্ছে বাড়ির মালিকের। মালিক দেয়াল সুন্দর ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে রং লাগিয়ে টাকা খরচ করছে। আবার সেই দেয়াল পোস্টার লাগিয়ে নষ্ট করছে তারা।’

আলী নূর নামে এক কলেজ ছাত্র বলেন, ‘পোস্টারে ছয়লাব, দেয়াল দস্যুদের কবলে জেলা সদরের অলিগলির ওয়ালগুলো। অনুমতি ছাড়া দেয়ালে যেকোনো ধরনের পোস্টার লাগানো অপরাধ বলে মনে করেন। জেলা জুড়ে প্রতিনিয়ত কোচিংসহ নানা রাজনৈতিক সংগঠনের নির্বাচন, সম্মেলন, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পোস্টার সাঁটাতে দেখা যায়। একটার ওপর আরেকটা পোস্টার লাগিয়ে চলে যায়। দেয়ালের যে একজন মালিক আছে তাদের কোনো বোধ থাকে না। আমাদের দেশেই বিশৃঙ্খলভাবে প্রচার প্রচারণার জন্য ছবি বা লেখা দিয়ে যত্রতত্র পোস্টার লাগানো হয়।’

সমাজকর্মী ইসরাইল সেন্টু বলেন, “আইনের দ্বিমুখী প্রয়োগের কারণে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সহজ নয়। সকলের ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ এক ও অভিন্ন হলে পোষ্টার লাগিয়ে শহরের শ্রীহানী রোধ করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
শান্তা নামের এক নারী পথযাত্রী বলেন, ‘সন্তানদের সাথে নিয়ে সিনেমা হলের সামনে দিয়ে গেলে লজ্জা লাগে। এত অশ্লীল ছবির পোস্টার লাগিয়েছে দেয়ালে দেয়ালে। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের জন্য এসব পোস্টার খুব ক্ষতিকারক। কারণ এসব পোস্টার দেখার পর উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের মন-মানসিকতা অন্য দিকে মোড় নেয়।’

তৌফিকুল নামের এক রিক্সাচালক বলেন, ‘তান্ত্রিক কবিরাজদের পোস্টার দেয়ালে দেয়ালে লাগিয়ে হিজিবিজি করে সৌন্দর্য নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। জেলা শহরের প্রায় সব বাড়ির দেয়াল ভরে গেছে এসব পোস্টারে। এমন অবস্থা হয়েছে, একেক গলি একেকজনের দখলে থাকে। গাছ, কবুতর, সাপ, কঙ্কালসহ নানা রকম বিভিন্ন কালারের ছবি দিয়ে পোস্টার লাগানো হয়েছে মানুষের বাসা-বাড়ির দেয়ালে।‘
এবিষয়ে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শংকর কুমার কুন্ডু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কলেজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার লক্ষে তিনি বাউন্ডারি ওয়াল রঙ করিয়েছেন। কিন্তু পোষ্টার গাম দিয়ে ওয়ালে সাঁটিয়ে দিয়ে সৌন্দর্যের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে। এরা মুলত রাতের আঁধারে এসব পোষ্টার লাগায়, তাই তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছেনা। তিনি এসব রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন। এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সরকারীভাবে পোষ্টার লাগানোর জন্য নির্ধারিত কোন স্থান বা অনুমদিত জায়গা নেই।

দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১২ সালে প্রণয়নের ১০ বছর পরও তা প্রয়োগ হচ্ছে না।
আইন ভঙ্গে যে শাস্তি-
‘দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ)আইন-২০১২’র ৪ ধারায় বলা হয়েছে, এই আদেশের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দেয়াল লিখন বা পোস্টার লাগানোর জন্য প্রশাসনিক আদেশ দ্বারা স্থান নির্ধারণ করিয়া দিতে পারিবে এবং উক্তরূপে নির্ধারিত স্থানে দেয়াল লিখন বা পোস্টার লাগানো যাইবে। তবে শর্ত থাকে যে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে উল্লেখিত নির্ধারিত স্থান ব্যতিত অন্য কোন স্থানে বিধি দ্বারা নির্ধারিত শর্ত ও পদ্ধতিতে এবং নির্দিষ্ট ফি প্রদান সাপেক্ষে দেয়াল লিখন বা পোস্টার লাগানো যাইবে।’
আইনের ‘৩’ ধারায় বলা হয়েছে, ‘ধারা ৪ অনুযায়ী নির্ধারিত স্থান ব্যতিত অন্য কোনো স্থানে দেয়াল লিখন বা পোস্টার লাগানো যাইবে না। আইনের ‘৬’ ধারার ১ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ধারা ৩ ও ৪ এর বিধান লঙ্ঘন করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে। ২ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ধারা ৩ ও ৪ এর বিধান লঙ্ঘন করিয়া দেয়াল লিখন বা পোস্টার লাগাইলে উক্ত অপরাধের জন্য উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অন্যূন্য ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা এবং অনূর্ধ্ব ১০ (দশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড আরোপ করা যাইবে, অনাদায়ে অনধিক ১৫ (পনের) দিন পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা যাইবে এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাহার নিজ খরচে সংশ্লিষ্ট দেয়াল লিখন বা পোস্টার মুছিয়া ফেলিবার বা অপসারণের জন্য আদেশ প্রদান করা যাইবে।

৩ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো সুবিধাভোগীর অনুকূলে ধারা ৩ ও ৪ এর বিধান লঙ্ঘন করিয়া দেয়াল লিখন বা পোস্টার লাগাইলে উক্ত অপরাধের জন্য উক্ত সুবিধাভোগীর বিরুদ্ধে অন্যূন ১০ (দশ) হাজার টাকা এবং অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদন্ড আরোপ করা যাইবে, অনাদায়ে অনধিক ৩০ (ত্রিশ) দিন পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা যাইবে এবং উক্ত সুবিধাভোগীকে তাহার নিজ খরচে সংশ্লিষ্ট দেয়াল লিখন বা পোস্টার মুছিয়া ফেলিবার বা অপসারণের জন্য আদেশ প্রদান করা যাইবে।

এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মামুন-অর-রশিদ বলেন, ‘পৌরসভা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে পোস্টার, ব্যানারের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান রয়েছে। অবৈধ পোস্টারিংয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি এবং আমাদের প্রচার প্রচারণাও অব্যহত থাকবে ।’

জেলার স্থানীয় প্রশাসনের উপ-পরিচালক দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও জানান, নাগরিক জীবনে পরিস্কার-পরিছন্নতা দরকার রয়েছে। সুস্বাস্থ্যের জন্যও পরিস্কার-পরিছন্নতা অপরিহায্য। পোষ্টার-ফেস্টুন বিরোধী অভিযান জোরদার করা হবে। অবৈধ এসকল পোষ্টার-ফেস্টুন সরিয়ে শহরের সৌন্দয্য বৃদ্ধির জন্য তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়রকে অনুরোধ করবেন বলে জানান।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
Copyright All rights reserved © 2024 Chapaidarpon.com
Theme Customized BY Sobuj Ali
error: Content is protected !!