চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ও শিবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর খায়রুল আলম জেম হত্যা মামলার আসামী জেলা কৃষকলীগের যুগ্ম সম্পাদকসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার (২৪ এপ্রিল) বেলা দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, জেলা কৃষকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেসবাহুল হক টুটুল, তার সহযোগী মাসুদ রানা, ইব্রাহিম, মো: শামীম রেজা, মিলন হোসেন, মো. রুনু, রোকনুজ্জামান, রনি ও মেরাজ খোনা। অন্যদিকে, এই হত্যায় মূল পরিকল্পনাকারী ও প্রধান আসামিদেরকে আটক না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদি ও নিহতের স্বজনরা। তাদের দাবি, রাজনৈতিক দ্বন্দের জের ধরে খাইরুল আলম জেমকে হত্যার মূল পরিকল্পনা করেন প্রভাবশালী কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা। বাদি মনিরুল ইসলাম, সাক্ষী মো. মজিদ ও নিহতের স্বজনরা জানান, এ ঘটনায় পুলিশ শুরু থেকে অসহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করছে। মূল পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারীদেরকে এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার পায়তারা করছে। এখন পর্যন্ত পুলিশ তাদেরকে আটক করেনি। তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, পুলিশ তাদের বিষয়ে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। সংবাদ সম্মেলনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার এএইচএম আব্দুর রাকিব বলেন, জেম হত্যার পর থেকে এজহারভুক্ত আসামীরা আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে তথ্য-প্রযুক্তি-ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রোববার তাদের একটি দূরবর্তী জেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে কোথা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করেছে এবিষয়ে পুলিশ সুপার কোন তথ্য দেননি। পুলিশ সুপার আরো বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের আজ যে কোন সময়ের মধ্যে আদালতে সোপর্দ করা হবে এবং পুলিশের পক্ষ থেকে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর হলে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে কেন তারা জেমকে হত্যা করলো সে রহস্যটি বেরিয়ে আসবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ বদ্ধপরিকর বলে জানান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এদিকে, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কথা অস্বীকার করে সংবাদ সম্মেলনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার এএইচএম আব্দুর রাকিব বলেন, জেম হত্যার পর থেকে এজাহারভুক্ত আসামীরা আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে তথ্য-প্রযুক্তি-ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রোববার দিবাগত রাতে তাদের একটি দূরবর্তী জেলা থেকে প্রেপ্তার করা হয়। বাকি আসামীদেরকেও গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। উল্লেখ্য, গত ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে খায়রুল আলম জেম শহরের উদয়ন মোড়ের একটি হোটেল থেকে ইফতারি কেনে বাসায় ফেরার পথে সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর শনিবার রাতে নিহত সাবেক কাউন্সিলর জেমের ভাই মনিরুল ইসলাম বাদি হয়ে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এবিষয়ে গত শনিবার (২২ এপ্রিল) দিবাগত রাতে মোট ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে সদর মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলায় আরও ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এদিকে, এই ৫ জনকে রবিবার (২৩ এপ্রিল) দিবাগত গভীর রাতে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা-ডিবি পুলিশ ও থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে আটক করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলেন-জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হত্যা মামলার ০৩ নম্বর আসামী জেলা শহরের মিলকি বাগানপাড়া মহল্লার মৃত আলতাব হোসেনের ছেলে মেসবাহুল হক টুটুল (৪২), তার সহযোগী জেলা শহরের মসজিদপাড়া মহল্লার মৃত মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে মো. মাসুদ রানা ওরফে রানা (৩৮) মাসুদ রানা, একই এলাকার মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে মো. ইব্রাহিম ওরফে দাউদ ইব্রাহিম ওরফে হাবা (৩২), হুজরাপুর রেলবাগান এলাকার রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে শামীম রেজা (৩৫) ও প্রান্তিকপাড়া মহল্লার সানাউল হকের ছেলে মিলন হোসেন (৩০)। এবিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদ বলেন, এ ঘটনার সাথে জড়িত মূলহোতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। যে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে, তা সবই লোকদেখানো। আমরা সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি চাই।