চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে পিতার পেটুয়া বাহিনীর হামলায় পুত্র, পুত্রবধু ও নাতি গুরুতর আহত হয়েছে। এঘটনায় পুত্রবধু ও নাতি নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধী নিয়েছেন। বর্তমানে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসায় রয়েছেন। ঘটনা গত শুক্রবার সকালে নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের খোলসী নতুনটোলা গ্রামের। এঘটনায় পুত্র নাচোল থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন।
আহত পুত্র তোফাজ্জুল (৪৫) জানায়, তার পিতার সাথে ভিটামাটি সংক্রান্ত জটিলতায় একটি শালিস শুক্রবার সকালে তাদের বাড়ির সামনে হয়। সে শালিসে সভাপতি ছিলেন ফতেপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম ইসরাইল হকের ছেলে ইসমাইল হক অপু। শালিস শেষ হবার আগেই নুর মোহাম্মদ নুরুর দুই ছেলে ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা তার উপর হামলা করে। সে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে গেলে পরে তারা তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার স্ত্রী ও ছেলেকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর জখম করে এবং বাড়িতে লুটপাট চালায়।
‘৯৯৯’ কল দিলে নাচোল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তার স্ত্রী ও ছেলেকে উদ্ধার করে নাচোল হাসপাতালে ভর্তি করে। দুইদিন পর নয়জনের নাম উল্লেখ করে নাচোল থানায় একটি এজাহার দিয়েছেন বলেও জানান তোফাজ্জুল। অন্যদিকে, প্রত্যক্ষদর্শী ও এজাহার সুত্রে জানা যায়, ফতেপুর ইউনিয়নের খোলসী নতুনটোলা গ্রামের লোকমান আলী তার ছেলে তোফাজ্জুলকে তার বাড়িতে রাখতে চায়না। বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বাড়ি করার জন্য লোকমান তার ছেলে তোফাজ্জুলকে পৌনে দুই লক্ষ টাকা দেয়। সেই টাকা দিয়ে তোফাজ্জুল বাড়ি করার জন্য মাটি ও ইট ক্রয় করে। বাড়ি না ছাড়ায় পিতা লোকমান আলী তার ছেলে তোফাজ্জুলের বিরুদ্ধে শালিস ডাকে। শালিসে তোফাজ্জুল বাড়ি করতে আরও টাকা ও সময়ের প্রয়োজন জানিয়ে আরও চারমাস পিতার বাড়িতে থাকার আবেদন করে।
আবেদন করার সাথে সাথেই শালিসে উপস্থিত ফতেপুর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার নুর মোহম্মদ ওরফে নুরুসহ তার চার ছেলে জাইদুল হক (৪০), সাইরুল ইসলাম (৪৫), তোফি (৫০), মফি (৪৮) এবং নাতি শুভ (৩০) তার উপর হামলা চালায়। এসময় আরও মৃত গুহি মন্ডলের ছেলে জাক্কার আলী (৫৫), মৃত বাসিদ বারিকের ছেলে তাজামুল (৫২), মোঃ তাহির হোসেনের ছেলে মোস্তাফিজুর (মোস্তা) (৪৫) তার উপর হামলা চালায়। এসময় সে আহতাবস্থায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও তারা পরবর্তীতে তার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার স্ত্রী ও ছেলেকে গুরুতর জখম করে। এসময় আসামীরা তোফাজ্জুল বাড়ি থেকে স্বর্ণের এক জোড়া বালা, কানের পাশা ও নগদ ৫২ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
এজাহারে এঘটনার জন্য হুমুকদাতা হিসেবে নুর মোহম্মদ ওরফে নুরুর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তোফাজ্জুল এ প্রতিবেদককে আরও জানায়, সন্ত্রাসীদের ভয়ে সে পরিবার নিয়ে বাড়িতে ফিরতে পারছেনা। পরিবার নিয়ে বর্তমানে অন্যত্র বসবাস করছে। এবিষয়ে, শালিসের সভাপতি ইসমাইল হক অপু মোবাইল ফোনে জানান, তার নেতৃত্বেই শালিসটি হয়। এর দেড় বছর আগে তোফাজ্জুল তার পিতা-মাতার উপর অত্যাচার করলে তার পিতা তাকে বাড়িতে রাখবেনা মর্মে শালিস ডেকেছিল। শালিসে তোফাজ্জুলকে তার পিতা লোকমান আলী পৌনে দুই লক্ষ টাকা দিয়ে বের করে দিবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সিদ্ধান্ত মোতাবেক পিতা লোকমান তার ছেলে তোফাজ্জুলকে সে টাকাও পরিশোধ করে। কিন্তু তোফাজ্জুল বার বার সময় নিয়েও বাড়ি থেকে বের হচ্ছেনা। এজন্য গত শুক্রবার সকালে একটি শালিস হয়। সে শালিসে কোন মারামারি হয়নি। নাচোল থানার অফিসার ইনচার্জ মিন্টু রহমান জানান, যেহেতু পিতা-পুত্রের ঘটনা, বিষয়টির সমাধান হওয়ার কথা রয়েছে। সমাধান না হলে মামলাটি রুজু করা হবে।