ভারতের উড়িষ্যায় তিনটি ট্রেনের ভয়াবহ সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে তিনশ’র অধিক। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৯০০ জন যাত্রী। শনিবার (৩ জুন) রাজ্য সরকারের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপি’কে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, বিগত দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে ভারতে এটাই সবচেয়ে প্রাণঘাতী ট্রেন দুর্ঘটনা। উড়িষ্যা ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক সুধাংশু সারঙ্গি বলেছেন, আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। দুর্ঘটনাস্থলে এখনো উদ্ধারকাজ চলছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন দুপুর সোয়া ৩টা নাগাদ হাওড়ার অদূরে শালিমার স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করেছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। প্রায় চার ঘণ্টা পরে উড়িষ্যার বালেশ্বরের বাহানগা বাজারের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ২৩ বগির ট্রেনটি। স্থানীয় সূত্র বলছে, প্রথমে করমণ্ডল এক্সপ্রেসই তীব্র গতিতে গিয়ে ধাক্কা মারে একই লাইনে আগে থেকে চলতে থাকা একটি মালগাড়ির পেছনে। আঘাতে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন মালগাড়ির ওপরে উঠে যায়। ২৩টি বগির মধ্যে ১৫টি বগি লাইন থেকে ছিটকে পাশের ডাউন লাইনে ও নর্দমার মধ্যে গিয়ে পড়ে। তখন পাশের সেই লাইন দিয়ে আসছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত যেসব বগি ডাউন লাইনের ওপর পড়েছিল, সেগুলোতে গিয়ে ধাক্কা মারে সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। এতে হাওড়াগামী সেই ট্রেনটিরও দু’টি বগি লাইনচ্যুত হয়। উড়িষ্যার মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা টুইটারে বলেছেন, দুই শতাধিক অ্যাম্বুলেন্স ও ১০০’র বেশি চিকিৎসককে দুর্ঘটনাস্থলে ডাকা হয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে ৮০ জনের বেশি চিকিৎসক ঘটনাস্থলে কাজ করছেন।
এদিকে চিকিৎসার জন্য কলকাতা থেকে চেন্নাই যেতে অনেক বাংলাদেশি করমণ্ডল এক্সপ্রেস ব্যবহার করেন। সে কারণে দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটিতে যদি বাংলাদেশিদের কেউ থাকেন, তাদের তথ্য জানতে একটি হটলাইন চালু করেছে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন।
হটলাইন নম্বরটি (+৯১৯০৩৮৩৫৩৫৩৩ হোয়াটসঅ্যাপ) জানিয়ে কলকাতার উপ হাই কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সাধারণ বাংলাদেশিরা চিকিৎসার জন্য ওই ট্রেনটিতে যাতায়াত করেন। তাই দুর্ঘটনার পর ভারতের রেল কর্তৃপক্ষ ও উড়িষ্যা রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন। হাওড়া থেকে ২৫৫ কিলোমিটার দূরে দুই দ্রুতগামী যাত্রীবাহী ট্রেনের এ দুর্ঘটনায় আরও একটি মালবাহী ট্রেনও যুক্ত ছিল বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।
কলকাতা থেকে চেন্নাইমুখী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে গিয়ে পড়ে। ওই লাইনে যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস সেসময় সেখানে গিয়ে পৌঁছালে সংঘর্ষ বাধে। এতে ওই ট্রেনটিরও কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায় বলে দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে একটি মালবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় যাচ্ছিল।